Saturday, October 13, 2012

ফিকে হলো ভালোবাসার রং

ঢালিউড ইনফোটেইনমেইন্ট:: ১৯৫৬ সালে ঢাকায় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’র উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছিল পুরান ঢাকার ‘রূপমহল’ সিনেমা হলে।
অশ্লীলতা, আকাশ-সংস্কৃতির উৎকট প্রভাব, হল মালিকদের ব্যবসা পরিবর্তনসহ নানাকারণে সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শক।
এরই মধ্যে অনেক প্রতীক্ষার পর ৫ অক্টোবর দেশজুড়ে মুক্তি পেয়েছিলো শাহিন-সুমন পরিচালিত `ভালোবাসার রঙ` চলচ্চিত্রটি।
ছবিটি নির্মাণ করা হয় বিশ্বনন্দিত অত্যাধুনিক ক্যামেরা রেড মিস্টেরিয়ামে। অনেক প্রচার-প্রচারণায় আলোচনায় থাকলেও এখন তা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

তবে, জাজ মাল্টিমিডিয়ার মিশন অনেকটাই সফল। কারণ দেশীয় সিনেমার পর্দায় একটা পরিবর্তন দেখা গেছে।
সিনেমা হলের পর্দা ও শব্দে পরিবর্তনের ছোঁয়া দেখা গেলেও ছবির ভেতরের অবস্থা অনেক করুণ।
সিনেমা হিসেবে `ভালোবাসার রঙ` একেবারেই গতানুগতিক। অন্য আর আট-দশটা ছবির মতোই।
একদল দর্শক গত শুক্রবার বলাকা সিনেমা হলে যায় সিনেমাটি দেখতে। কিন্তু টিকিট পায় না, অতপর বাড়ি ফেরা। তারা বুধবার অবশেষে টিকিট পান, সাথে আমিও! শুক্রবার যে পরিমাণ দর্শক ছিল, তার ৪ ভাগের ১ ভাগও ছিল না বুধবারে।
এর আগে বিভিন্ন খবরে প্রকাশ ভালোবাসার রং নাকি প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা আয় করেছে। প্রতিটি সিনেমা হলে ২০০ থেকে ২৫০ জন দর্শক ছবি দেখেন। কিন্তু কয়েকদিন ধরেতো প্রায় সব আসন ফাঁকা। তাহলে কিভাবে আয় হলো এত টাকা ?

এরপর গল্পের কথা যদি বলি, সালাম চৌধুরী (রাজ্জাক) তার নাতনি মাহিকে নিয়ে গ্রামে বসবাস করেন। বাপ্পি (নায়ক) যে নাকি পরপর ২ বার সালাম চৌধুরীর লাঠি ও টেপরেকর্ডার চুরি করে। কারণ চুরি করতে পারলে মাহির মন পাবে বাপ্পি। মাহি তাই চৌধুরী নিরাপত্তা কর্মীদের বোকা বানিয়ে চুরি করতে ঢুকে যায় চৌধুরী মহলে।

প্রথমবার চুরি করে খুব সহজে পালেতে পারলেও, দ্বিতীয়বার একটু কষ্ট হয় (মাহির চাচার আঘাতে হাতে ব্যাথা পায়)। বাপ্পির কষ্টে মাহি নিজেকে অপরাধী মনে করে মাঝরাতে চৌধুরী বাড়ির কন্যা ছুটে যায় বাগানে।
বিরতির ঠিক আগে আগে জানা গেল মাহির নাম আসলে ফারিয়া। স্মৃতিভ্রষ্ট এই তরুণী পাঁচ বছর ধরে রাজ্জাকের নাতনী হয়ে আছেন। তাঁর বাবার বিশাল সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য কিলার অমিত হাসানকে ব্যবহার করে মিজু আহমেদ, নাসরিন আর ইলিয়াস কোবরা।
ফারিয়ার মা-বাবাকে যারা খুন করেছে, এত বছর পরে তারাই আজ ফারিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে। রাজ্জাককে খুন করে ফারিয়ার পিছু নেন অমিত। বাপ্পি ভিলেনের সাথে য‍ুদ্ধ করে ফারিয়াকে ফিরিয়ে দেয় হাজার টাকার সম্পত্তি। এই হলো মোটামুটি ছবির গল্প।

এসির ঠান্ডা বতাসের সাথে ছবির ঠাণ্ডা সংলাপে সবাই যখন চুপ, তখন দর্শকরা নাড়াচারা দিলেন আইটেম গানে।সাথের জন বলে উঠলেন গানটা তো বেশ দারুণ।
ছবি শুরু হবার পর পাশে থাকা একজন দর্শক বললেন, ভাই দেখবেন কাবিলার একটা গান থাকবেই। প্রশ্ন করলাম আগে দেখেছেন?, সে বললো- না ভাই এটা কমন বেপার। অতপঃর ঠিক তাই হলো!
ছবির নিজস্ব কোনো স্টাইল তৈরি করতে পারেননি পরিচালক। আর বিরতির আগ মুহূর্তে জানা গেল মাহির নাম ফারিয়া রহমান, অথচ ছবির শেষভাগে নায়িকা নিজ মুখে ফোনে বলছেন, তার নাম ফারিয়া আহমেদ!

ছবির সংলাপ ভালো না থাকলেও গানগুলো বেশ ভালো। আর অভিনয়ে বাপ্পীকে একেবারেই শিশুশিল্পী মনে হয়েছে। আর সংলাপ বলার বিষয়ে সে এখনও অনেক কাঁচা। বরং তার চেয়ে ছবির নায়িকা মাহি বরং অভিনয়ে বেশ সাবলীল। আর আইটেম গানে আলিশা ভালো করেছে। সেই সাথে মারামারির দৃশ্যগুলোতে নতুন সাউন্ড পাওয়া গেছে।
ছবির প্রচারণায় বলা হয়েছে, এটি রেড ক্যামেরায় নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা। এটাও সত্য নয়। অ‍ার ছবির কালারেও অনেক ঝামেলা দেখা গেছে। এক কথায় ভালোবাসার রঙ ফ্যাকাশে মনে হয়েছে।

তবে নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করার জন্য জাজ মাল্টিমিডিয়াকে অনেক ধন্যবাদ। তবে প্রতিটি ছবির প্রযুক্তির পাশাপাশি ভেতরের গল্প, অভিনয় ও গানের জায়গাটা ঠিক থাকলে হয়তো আমরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে যেতে পারব এবং মানুষকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিনোদন দিতে পারব। ::..ঢালিউড ইনফোটেইনমেইন্ট.::

No comments:

Post a Comment